• বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
  • ঢাকা, বাংলাদেশ

মোদি-অমিত শাহ’র ভারতকে মাওবাদ মুক্ত করার সাথে ভেনুগোপালের সারেন্ডার লাইনের কোনো পার্থক্য নেই

মোদি-অমিত শাহ’র ভারতকে মাওবাদ মুক্ত করার সাথে ভেনুগোপালের সারেন্ডার লাইনের কোনো পার্থক্য নেই

  আন্দোলন প্রতিবেদন  

বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

মাও-মৃত্যু পরবর্তীতে প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক চীন কয়েক ধাপ পেরিয়ে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদে অধঃপতিত হওয়ার পরে অনেক দেশে অনেক পার্টিই মাওবাদী লাইনে বিপ্লবী আন্দোলন এবং গণযুদ্ধ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তার মধ্যে পেরু-বাংলাদেশ-তুরস্ক-নেপাল সাময়িকভাবে পরাজিত হলেও ফিলিপাইন-ভারত বিকশিত করতে সক্ষম হয়। সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবী কর্মসূচির ভিত্তিতে বিকাশমান গণযুদ্ধ ছিল ভারতীয় গণযুদ্ধ। একে ধ্বংস করার জন্য সকল সাম্রাজ্যবাদের সহায়তায় ভারতের হিন্দুত্ববাদী আমলা দালাল পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণি ‘সালওয়া জুড়ুম’, ‘গ্রিনহান্ট, ‘সমাধান’,  ‘প্রহার’সহ একের পর এক চালানো দমন অভিযানে ব্যর্থ হয়ে শুরু করেছে “কাগার” নামে দমন অভিযান। এই কাগার বা শেষ যুদ্ধের সাথে যুক্ত হয়েছে পার্টির মধ্য থেকে ভেনু গোপাল/সনু’র উদ্ভুত অস্ত্রসমর্পণের মাধ্যমে কথিত বিপ্লব রক্ষা করার সারেন্ডার লাইন।

পার্টির একজন প্রাক্তন নেতা সনুর নেতৃত্বে একটা সংখ্যালঘু অংশ আত্মসমর্পণের লাইনে পার্টি থেকে বিভক্ত হয়ে গেছে। বন্দিদের কেউ কেউ বা যারা গ্রেফতার আছে সরকার স্বীকার করে না বা এখন যারা গ্রেফতার হচ্ছে সরকারি বাহিনী তাদেরকে সনুর আত্মসমর্পণকে সমর্থনের জন্য চাপ দিচ্ছে। সরকারি বাহিনী এখন সনুর মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। অপারেশন কাঘরের সাফল্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারের পাশাপাশি মাওবাদীদের খবরাখবর অর্ধসত্য-বিকৃত প্রচার করছে। যেমন– কাগার প্রতিরোধে ২০২৪ সালে পিএলজি’র ১৭০টা আক্রমণকে (ভারতীয় বিপ্লবের ইংরেজি অনলাইন মুখপত্র পিপলস্ মার্চ, জানুয়ারি/২৫) কোথাও প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে না।  গণযুদ্ধের এই পর্যায়ে এটা বড় সংকট কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিপ্লবী আন্দোলন বা ভারতের মাওবাদী আন্দোলনের জন্য এই আত্মসমর্পণ লাইন বা বিলোপবাদ নতুন কিছু নয়। নকশালবাড়ি থেকে রং-বেরংয়ের সংশোধনবাদী-সুবিধাবাদী লাইনকে পরাজিত করেই বিগত ৫০ বছরে ভারতের মাওবাদীরা অনেক সফলতা-ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে বিপ্লব সংঘটিত করার মতো পার্টি-বাহিনী-ফ্রন্টসহ বাস্তব উন্নত অবকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। যা বিপ্লব আকাঙ্ক্ষী জনগণের মধ্যে অনেক আশাবাদ তৈরি করেছে। সেই আশাবাদী জনগণকে প্রশ্নের/সংশয়ের মধ্যে নিক্ষেপ করছে সনুর আজকের অবস্থান।

সনু তার আত্মসমর্পণ লাইনের সপক্ষে কিছু রাজনৈতিক যুক্তি/তর্ক তুলে ধরেছে। সনু এমন একজন বিপ্লবী ছিল যে কিনা প্রায় ৫০ বছর মাওবাদী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তার প্রশ্নগুলো বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। সনুর আত্মসমর্পণের রাজনৈতিক-মতাদর্শগত কারণ আমরা এখনো বিস্তারিতভাবে জানি না। পার্টি নিশ্চয়ই তার গভীর মতাদর্শিক-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করবে। কিন্তু অতীত শ্রেণি সংগ্রামের অভিজ্ঞতা এবং আত্মসমর্পণের পক্ষে তার উত্থাপিত কয়েকটি বক্তব্য আমরা এখানে বিশ্লেষণ করতে পারি।  তার মূল কথা হলো– আজকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গণযুদ্ধ টিকিয়ে রাখা ও বিকশিত করা সম্ভব নয় এবং পার্টি নতুন পরিস্থতি ধারণ করে করণীয় নির্ধারণ করতে পারছে না। নতুন কেউ পার্টিতে/গণযুদ্ধে যুক্ত হচ্ছে না।  শত্রুর অব্যাহত দমনে পার্টি-বাহিনী ক্ষয়পাপ্ত হয়ে গেছে। তাই পার্টিকে রক্ষার জন্য সারেন্ডার বা আত্মসমর্পণ।

আজকে সনুর মুখে শুনলেও এসব কথা আমরা সর্বদাই বিপ্লব বিরোধীদের মুখে শুনে থাকি। আমরা জানি নকশালবাড়ি উত্থানের পরে সরকারি দমনে চারু মজুমদারের শহিদ হওয়ার মধ্য দিয়ে নকশালবাড়ি বিপ্লবী ধারা সাময়িকভাবে পরাজিত হয়। সেই পার্টি তার ত্রুটি-সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সারা ভারতে তথা বিশ্বে মাওবাদীদের অন্যতম শক্তিশালী পার্টিতে পরিণত হয়েছে।  

নকশালবাড়ি উত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতে মাওবাদী পার্টি গঠিত হলেও নিয়মিত বাহিনী বা ঘঁাটি এলাকা গড়ে ওঠার পূর্বেই চারু মজুমদারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শহিদ বা গ্রেফতার হয়েছিলেন। পার্টি প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। সেই পার্টির নতুন সম্পাদক ক.বাসবরাজ যখন ৬০ ঘন্টা যুদ্ধ করে শহিদ হন তখন তার সাথে ৩৫ জন পিএলজি গেরিলাও ছিলেন। এই গেরিলারা কি আকাশ থেকে পড়েছিল? আর সনু নিজে ৬০ জন সদস্যসহ আত্মসমর্পণ করেছে তাই নয়– আরো নাকি অনেকেই আত্মসমর্পণ করবে। ক্ষয়প্রাপ্ত সংগঠনে এত শহিদ ও আত্মসমর্পণ কি সনুর দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়? এগুলো কি বিপ্লবী সংগ্রামের ক্ষয়, নাকি ক্লান্ত বিপ্লবীর প্রলাপ??

সুতরাং শত্রুর দমন নয়, ক্লান্ত বিপ্লবী সনুর দলত্যাগই বিপ্লবী আন্দোলনকে সংকটে ফেলছে। আবার এটাও সত্যি বিকাশমান যুদ্ধের নতুন পরিস্থিতিকে ধারণ করে নতুন করণীয় নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্নও আছে। গণযুদ্ধকে আঁকড়ে ধরেই সত্যিকার মাওবাদীরা সেই নতুন পরিস্থিতির করণীয় নির্ধারণ বা সমাধান করতে পারবেন। তাকে বর্জন করে নয়। আত্মসমর্পণ বা তথাকথিত মূলধারা বা সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণমূলক ধারায় মিশে গিয়ে নয়। মোদি-অমিত শাহের মূলধারার অর্থ ভারতে সাম্রাজ্যবাদ-আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ-সামন্তবাদী শোষণ অব্যাহত রাখা। শ্রমিক-কৃষক-নিপীড়িত জনগণের উপর শোষণ-নিপীড়ন অব্যাহত রাখায় সহায়তা করা। সনুর সারেন্ডার লাইনও বিপ্লব বর্জন করে সেই তথাকথিত মূল ধারাতেই ফিরে গেছে।

সমাজ পরিবর্তনের মাওবাদী বিপ্লবী রাজনীতি এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য গণযুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদ আগের মতো মোকাবেলা করে না। তারাও বিগত সময়ের বিশেষত দ্বিতীয় যুদ্ধের পর ভিয়েতনাম- ৯/১১ আক্রমণ-ইরাক যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধ-বিদ্রোহকে পর্যালোচনার ভিত্তিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এলআইসি নামে নিষ্ঠুরতম রণনীতি গ্রহণ করেছে। এলআইসি’র কতিপয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ঘাতক বাহিনীর মাধ্যমে গোপনে নেতৃত্ব হত্যা, তথ্য বের করা, বিশ্বাসঘাতক বানানো, প্রতিবিপ্লবী বাহিনী তৈরি করা (সলওয়া জুড়–ম, ডিআরজি– ইত্যাদি), প্রভৃতি। যাকে তারা কম তীব্র ও কম সংঘর্ষের যুদ্ধনীতি বলে থাকে। পেরুতে শান্তি লাইন, নেপালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে যুদ্ধ বিরতি এবং আজকে ভারতে মূল ধারায় ফিরানো সবই হচ্ছে এলআইসি’র বাস্তব প্রয়োগ।

আমাদের দেশসহ সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত দেশে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে এলআইসি-কে পরাজিত করেই বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে। এই দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের লাইন আয়ত্ব করার ক্ষেত্রে সনু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তার অস্ত্রসমর্পণ  বা আত্মসমর্পণবাদী লাইনে তারসহ কিছু ক্লান্ত বিপ্লবীর জীবন রক্ষা পেলেও তাতে বিপ্লব থাকবে না। এমন বিলোপবাদী কথাই ৫০-এর দশকে তেলেঙ্গানার বিশ্বাসঘাতক লাইন অথবা সিএম-মৃত্যু পরবর্তীতে নির্বাচনপন্থিরা বলেছিল। অবশ্যই এই বিলোপবাদী লাইন এবং কাঘরকে পরাজিত করেই সিপিআই(মাওবাদী) নেতৃত্বে সত্যিকার বিপ্লবীরা দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতীয় বিপ্লবকে আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে নেবেন। 

– ১৭/১০/২৫।

মোদি-অমিত শাহ’র ভারতকে মাওবাদ মুক্ত করার সাথে ভেনুগোপালের সারেন্ডার লাইনের কোনো পার্থক্য নেই

 আন্দোলন প্রতিবেদন 
বৃহঃস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫  |  অনলাইন সংস্করণ

মাও-মৃত্যু পরবর্তীতে প্রাক্তন সমাজতান্ত্রিক চীন কয়েক ধাপ পেরিয়ে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদে অধঃপতিত হওয়ার পরে অনেক দেশে অনেক পার্টিই মাওবাদী লাইনে বিপ্লবী আন্দোলন এবং গণযুদ্ধ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তার মধ্যে পেরু-বাংলাদেশ-তুরস্ক-নেপাল সাময়িকভাবে পরাজিত হলেও ফিলিপাইন-ভারত বিকশিত করতে সক্ষম হয়। সমাজতন্ত্র-কমিউনিজম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবী কর্মসূচির ভিত্তিতে বিকাশমান গণযুদ্ধ ছিল ভারতীয় গণযুদ্ধ। একে ধ্বংস করার জন্য সকল সাম্রাজ্যবাদের সহায়তায় ভারতের হিন্দুত্ববাদী আমলা দালাল পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণি ‘সালওয়া জুড়ুম’, ‘গ্রিনহান্ট, ‘সমাধান’,  ‘প্রহার’সহ একের পর এক চালানো দমন অভিযানে ব্যর্থ হয়ে শুরু করেছে “কাগার” নামে দমন অভিযান। এই কাগার বা শেষ যুদ্ধের সাথে যুক্ত হয়েছে পার্টির মধ্য থেকে ভেনু গোপাল/সনু’র উদ্ভুত অস্ত্রসমর্পণের মাধ্যমে কথিত বিপ্লব রক্ষা করার সারেন্ডার লাইন।

পার্টির একজন প্রাক্তন নেতা সনুর নেতৃত্বে একটা সংখ্যালঘু অংশ আত্মসমর্পণের লাইনে পার্টি থেকে বিভক্ত হয়ে গেছে। বন্দিদের কেউ কেউ বা যারা গ্রেফতার আছে সরকার স্বীকার করে না বা এখন যারা গ্রেফতার হচ্ছে সরকারি বাহিনী তাদেরকে সনুর আত্মসমর্পণকে সমর্থনের জন্য চাপ দিচ্ছে। সরকারি বাহিনী এখন সনুর মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে। অপারেশন কাঘরের সাফল্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচারের পাশাপাশি মাওবাদীদের খবরাখবর অর্ধসত্য-বিকৃত প্রচার করছে। যেমন– কাগার প্রতিরোধে ২০২৪ সালে পিএলজি’র ১৭০টা আক্রমণকে (ভারতীয় বিপ্লবের ইংরেজি অনলাইন মুখপত্র পিপলস্ মার্চ, জানুয়ারি/২৫) কোথাও প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে না।  গণযুদ্ধের এই পর্যায়ে এটা বড় সংকট কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিপ্লবী আন্দোলন বা ভারতের মাওবাদী আন্দোলনের জন্য এই আত্মসমর্পণ লাইন বা বিলোপবাদ নতুন কিছু নয়। নকশালবাড়ি থেকে রং-বেরংয়ের সংশোধনবাদী-সুবিধাবাদী লাইনকে পরাজিত করেই বিগত ৫০ বছরে ভারতের মাওবাদীরা অনেক সফলতা-ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে বিপ্লব সংঘটিত করার মতো পার্টি-বাহিনী-ফ্রন্টসহ বাস্তব উন্নত অবকাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। যা বিপ্লব আকাঙ্ক্ষী জনগণের মধ্যে অনেক আশাবাদ তৈরি করেছে। সেই আশাবাদী জনগণকে প্রশ্নের/সংশয়ের মধ্যে নিক্ষেপ করছে সনুর আজকের অবস্থান।

সনু তার আত্মসমর্পণ লাইনের সপক্ষে কিছু রাজনৈতিক যুক্তি/তর্ক তুলে ধরেছে। সনু এমন একজন বিপ্লবী ছিল যে কিনা প্রায় ৫০ বছর মাওবাদী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই তার প্রশ্নগুলো বিভিন্ন মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। সনুর আত্মসমর্পণের রাজনৈতিক-মতাদর্শগত কারণ আমরা এখনো বিস্তারিতভাবে জানি না। পার্টি নিশ্চয়ই তার গভীর মতাদর্শিক-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করবে। কিন্তু অতীত শ্রেণি সংগ্রামের অভিজ্ঞতা এবং আত্মসমর্পণের পক্ষে তার উত্থাপিত কয়েকটি বক্তব্য আমরা এখানে বিশ্লেষণ করতে পারি।  তার মূল কথা হলো– আজকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গণযুদ্ধ টিকিয়ে রাখা ও বিকশিত করা সম্ভব নয় এবং পার্টি নতুন পরিস্থতি ধারণ করে করণীয় নির্ধারণ করতে পারছে না। নতুন কেউ পার্টিতে/গণযুদ্ধে যুক্ত হচ্ছে না।  শত্রুর অব্যাহত দমনে পার্টি-বাহিনী ক্ষয়পাপ্ত হয়ে গেছে। তাই পার্টিকে রক্ষার জন্য সারেন্ডার বা আত্মসমর্পণ।

আজকে সনুর মুখে শুনলেও এসব কথা আমরা সর্বদাই বিপ্লব বিরোধীদের মুখে শুনে থাকি। আমরা জানি নকশালবাড়ি উত্থানের পরে সরকারি দমনে চারু মজুমদারের শহিদ হওয়ার মধ্য দিয়ে নকশালবাড়ি বিপ্লবী ধারা সাময়িকভাবে পরাজিত হয়। সেই পার্টি তার ত্রুটি-সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সারা ভারতে তথা বিশ্বে মাওবাদীদের অন্যতম শক্তিশালী পার্টিতে পরিণত হয়েছে।  

নকশালবাড়ি উত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতে মাওবাদী পার্টি গঠিত হলেও নিয়মিত বাহিনী বা ঘঁাটি এলাকা গড়ে ওঠার পূর্বেই চারু মজুমদারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা শহিদ বা গ্রেফতার হয়েছিলেন। পার্টি প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। সেই পার্টির নতুন সম্পাদক ক.বাসবরাজ যখন ৬০ ঘন্টা যুদ্ধ করে শহিদ হন তখন তার সাথে ৩৫ জন পিএলজি গেরিলাও ছিলেন। এই গেরিলারা কি আকাশ থেকে পড়েছিল? আর সনু নিজে ৬০ জন সদস্যসহ আত্মসমর্পণ করেছে তাই নয়– আরো নাকি অনেকেই আত্মসমর্পণ করবে। ক্ষয়প্রাপ্ত সংগঠনে এত শহিদ ও আত্মসমর্পণ কি সনুর দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়? এগুলো কি বিপ্লবী সংগ্রামের ক্ষয়, নাকি ক্লান্ত বিপ্লবীর প্রলাপ??

সুতরাং শত্রুর দমন নয়, ক্লান্ত বিপ্লবী সনুর দলত্যাগই বিপ্লবী আন্দোলনকে সংকটে ফেলছে। আবার এটাও সত্যি বিকাশমান যুদ্ধের নতুন পরিস্থিতিকে ধারণ করে নতুন করণীয় নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্নও আছে। গণযুদ্ধকে আঁকড়ে ধরেই সত্যিকার মাওবাদীরা সেই নতুন পরিস্থিতির করণীয় নির্ধারণ বা সমাধান করতে পারবেন। তাকে বর্জন করে নয়। আত্মসমর্পণ বা তথাকথিত মূলধারা বা সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণমূলক ধারায় মিশে গিয়ে নয়। মোদি-অমিত শাহের মূলধারার অর্থ ভারতে সাম্রাজ্যবাদ-আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ-সামন্তবাদী শোষণ অব্যাহত রাখা। শ্রমিক-কৃষক-নিপীড়িত জনগণের উপর শোষণ-নিপীড়ন অব্যাহত রাখায় সহায়তা করা। সনুর সারেন্ডার লাইনও বিপ্লব বর্জন করে সেই তথাকথিত মূল ধারাতেই ফিরে গেছে।

সমাজ পরিবর্তনের মাওবাদী বিপ্লবী রাজনীতি এবং তা প্রতিষ্ঠার জন্য গণযুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদ আগের মতো মোকাবেলা করে না। তারাও বিগত সময়ের বিশেষত দ্বিতীয় যুদ্ধের পর ভিয়েতনাম- ৯/১১ আক্রমণ-ইরাক যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধ-বিদ্রোহকে পর্যালোচনার ভিত্তিতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এলআইসি নামে নিষ্ঠুরতম রণনীতি গ্রহণ করেছে। এলআইসি’র কতিপয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ঘাতক বাহিনীর মাধ্যমে গোপনে নেতৃত্ব হত্যা, তথ্য বের করা, বিশ্বাসঘাতক বানানো, প্রতিবিপ্লবী বাহিনী তৈরি করা (সলওয়া জুড়–ম, ডিআরজি– ইত্যাদি), প্রভৃতি। যাকে তারা কম তীব্র ও কম সংঘর্ষের যুদ্ধনীতি বলে থাকে। পেরুতে শান্তি লাইন, নেপালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে যুদ্ধ বিরতি এবং আজকে ভারতে মূল ধারায় ফিরানো সবই হচ্ছে এলআইসি’র বাস্তব প্রয়োগ।

আমাদের দেশসহ সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত দেশে দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে এলআইসি-কে পরাজিত করেই বিপ্লব সম্পন্ন করতে হবে। এই দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের লাইন আয়ত্ব করার ক্ষেত্রে সনু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তার অস্ত্রসমর্পণ  বা আত্মসমর্পণবাদী লাইনে তারসহ কিছু ক্লান্ত বিপ্লবীর জীবন রক্ষা পেলেও তাতে বিপ্লব থাকবে না। এমন বিলোপবাদী কথাই ৫০-এর দশকে তেলেঙ্গানার বিশ্বাসঘাতক লাইন অথবা সিএম-মৃত্যু পরবর্তীতে নির্বাচনপন্থিরা বলেছিল। অবশ্যই এই বিলোপবাদী লাইন এবং কাঘরকে পরাজিত করেই সিপিআই(মাওবাদী) নেতৃত্বে সত্যিকার বিপ্লবীরা দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতীয় বিপ্লবকে আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে নেবেন। 

– ১৭/১০/২৫।

আরও খবর
 
শনি
রোব
সোম
মঙ্গল
বুধ
বৃহ
শুক্র